বর্তমান সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তি একটি আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী এই প্রযুক্তির ব্যবহার এতটাই দ্রুত বাড়ছে যে, অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন — AI কি মানুষের চাকরি কেড়ে নেবে?
ChatGPT, Google Bard, Midjourney, DALL·E-এর মতো AI টুল এখন শুধু লেখালেখি বা গবেষণার ক্ষেত্রেই নয়, বরং ডিজাইন, প্রেজেন্টেশন, ভিডিও এডিটিং, মার্কেটিং, এমনকি কাস্টমার সার্ভিসেও ব্যবহার হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে — মানুষের প্রয়োজন কি ফুরিয়ে যাচ্ছে?
বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণা বলছে, যেসব চাকরিতে বারবার একই ধরনের কাজ করতে হয়, সেগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিতে। যেমন: কনটেন্ট রাইটিং (নিচু মানের), গ্রাফিক ডিজাইন (টেমপ্লেট বেসড), ডেটা এন্ট্রি, কল সেন্টার, অ্যাকাউন্টিং ইত্যাদি। কারণ এসব কাজ AI খুব দ্রুত করতে পারে।
তবে এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। AI অনেক কাজ অটোমেট করলেও, মানুষের সৃজনশীলতা, আবেগ, এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা AI কখনোই পুরোপুরি ধারণ করতে পারবে না। আর তাই, যারা প্রযুক্তিকে সঙ্গী করে এগিয়ে যেতে জানেন, তাদের জন্য ভবিষ্যৎ এখনো উজ্জ্বল।
AI প্রযুক্তির কারণে তৈরি হওয়া নতুন পেশাগুলোর মধ্যে রয়েছে: AI প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার, কনটেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট, AI ট্রেইনার, ফ্যাক্ট চেকার, সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট এবং ডেটা অ্যানালিস্ট। এসব কাজের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে এবং আগামী দশকে আরও ব্যাপকভাবে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও AI আস্তে আস্তে কাজের ধরন বদলে দিচ্ছে। ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ইউটিউব ভিডিও তৈরি, ব্লগিং, এমনকি ভার্চুয়াল টিচিং — এসব ক্ষেত্রে AI টুলের ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যারা এগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলছেন, তারা ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।
তবে যারা এখনও পুরনো পদ্ধতিতে কাজ করছেন, পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে পারছেন না, তাদের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এখন সময় এসেছে প্রযুক্তিকে ভয় না পেয়ে শেখার ও ব্যবহার করার। AI ব্যবহার করে কিভাবে নিজের কাজ আরও সহজ, দ্রুত ও মানসম্পন্ন করা যায় — সেটিই শিখতে হবে।
আপনি যদি লেখক হন, তাহলে AI ব্যবহার করে গবেষণার সময় বাঁচাতে পারেন। যদি ডিজাইনার হন, তাহলে AI দিয়ে প্রাথমিক কনসেপ্ট বানিয়ে নিজের স্টাইল যোগ করতে পারেন। যদি শিক্ষক হন, তাহলে AI দিয়ে লেসন প্ল্যান বা কুইজ তৈরি করতে পারেন।
শেখার কোনো বিকল্প নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়তো কিছু চাকরি বদলে দেবে, তবে যারা শিখে নিচ্ছেন কিভাবে এটি কাজে লাগাতে হয় — তারা কখনোই পিছিয়ে পড়বেন না।
ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে চাইলে আপনাকে জানতে হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী, এটি কীভাবে কাজ করে এবং আপনি নিজে কীভাবে এর উপকার নিতে পারেন। প্রযুক্তিকে ভয় নয়, বরং নিজের অংশ করে তুলুন।
কারণ ভবিষ্যৎ সেই মানুষের, যে প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানে — প্রযুক্তির কাছে হেরে যায় না।