ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের হলফনামায় ব্যাপক সংস্কার আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত কমিশন বৈঠকে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে একটি খসড়া প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এই খসড়ায় বেশ কিছু নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকলে তা উল্লেখ করা, তফসিল ঘোষণার আগে পর্যন্ত যদি কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হন, তবে তার বিস্তারিত তথ্য জমা দেওয়া, প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের পেশার বিবরণ, দেশের বাইরের সম্পদের হিসাব, আগের প্রতিনিধিত্বের ইতিহাস, আয়কর সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য, এবং হলফনামায় মিথ্যা তথ্য না দেওয়ার অঙ্গীকার। এছাড়াও, হলফনামায় ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের স্বাক্ষর ও সিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমার ক্ষেত্রে ই-মেইলের মাধ্যমে জমা দেওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
খসড়া অনুসারে, প্রার্থীর নির্বাচনী এলাকার নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি অনুযায়ী) অনুযায়ী নাম, পিতা-মাতা, স্বামী/স্ত্রী, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং দ্বৈত নাগরিকত্বের তথ্য (হ্যাঁ/না) উল্লেখ করতে হবে। যদি দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকে, তবে কোন দেশ থেকে তা পেয়েছেন এবং কোন দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন, তাও জানাতে হবে। পাশাপাশি প্রার্থীকে ঘোষণা দিতে হবে যে, তিনি সংবিধানের ৬৬(২) ধারা এবং ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ধারা ১২ অনুযায়ী নির্বাচনে অযোগ্য নন।
ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত থাকলে, জামিনে মুক্ত হলে তার জামিনের আদালতের সত্যায়িত কপি এবং জেল কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত করতে হবে। মামলা কোন আইনে, কোন ধারায়, কোন আদালতে হয়েছে, মামলা নম্বর ও সর্বশেষ অবস্থা এবং নিষ্পত্তি হয়ে থাকলে তার সাল উল্লেখ করতে হবে।
পেশাগত অংশে প্রার্থীর বর্তমান ও পূর্বের পেশা, তার স্বামী বা স্ত্রীর বর্তমান ও পূর্বের পেশা, এবং নির্ভরশীলদের পেশার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে হবে।
প্রার্থীর আয়ের উৎস হিসেবে কৃষিকাজ, ভাড়া বাড়ি, ব্যবসা, শেয়ার-বন্ড, স্থাবর সম্পত্তি ইত্যাদির উল্লেখ বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি দেশ ও বিদেশে নিজ এবং নির্ভরশীলদের সম্পদের বিবরণও দিতে হবে।
প্রতিনিধিত্বের ইতিহাসে উল্লেখ করতে হবে পূর্ববর্তী নির্বাচনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি এবং তা কতটা পূরণ হয়েছে। ঋণসংক্রান্ত অংশে জানাতে হবে, প্রার্থী বা তার পরিবারের কেউ ঋণ নিয়েছেন কি না। থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাম, ঋণের পরিমাণ, খেলাপি ঋণের পরিমাণ এবং পুনঃতফসিল করা হলে তার সর্বশেষ অবস্থা জানাতে হবে।
আয়কর সংক্রান্ত অংশে প্রার্থী ও তার পরিবারের সর্বশেষ রিটার্ন, টিআইএন নম্বর, রিটার্নে দেখানো আয়, সম্পদ এবং পরিশোধিত করের পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে। এছাড়াও গত পাঁচ বছরের আয়কর রিটার্নের তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এই প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রার্থীদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেই হলফনামা আরও বিস্তারিত ও বাধ্যতামূলক তথ্যসংবলিত করা হচ্ছে।