গাজায় বিশুদ্ধ পানির জন্য অপেক্ষা করছিলেন অসংখ্য ফিলিস্তিনি। এমন সময় ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে শিশুসহ ৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া অফিস। তারা এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত তৃষ্ণা যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ১১২টি মিষ্টি জলের সংগ্রহ কেন্দ্র এবং ৭২০টি জলকূপ ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করেছে। এর ফলে ১২ দশমিক ৫ মিলিয়নের বেশি মানুষ বিশুদ্ধ পানির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
আল-জাজিরার গাজা প্রতিনিধি হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, পুরো গাজায় পানি সংকট এখন এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে পরিণত হয়েছে। তিনি জানান, গাজায় যেটুকু পানি পাওয়া যাচ্ছে, তার অধিকাংশই দূষিত ও লবণাক্ত। জীবন ঝুঁকিতে ফেলেও মানুষ বাধ্য হয়ে ওই পানি সংগ্রহ করছে। গত কয়েক মাসে অন্তত ১০ বার সাধারণ মানুষ পানির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সরাসরি হামলার শিকার হয়েছেন।
মধ্য গাজার একটি পানি সংগ্রহ কেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন অন্তত ১০ জন, যাদের ছয়জনই শিশু। এছাড়া শনিবার ও রোববার গাজার বিভিন্ন এলাকায় পৃথক হামলায় প্রাণ হারান অন্তত ২০২ জন। স্থানীয় সময় রোববার গাজা সিটি ও আশপাশের আবাসিক এলাকা ও শরণার্থীশিবিরে একের পর এক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। শুধু গাজা সিটিতেই নিহত হয়েছেন ৫২ জন। এর মধ্যে নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরে একটি পানি বিতরণ কেন্দ্রে হামলায় নিহত হন ১০ জন এবং আহত হন অন্তত ১৬ জন।
এদিকে ত্রাণ বিতরণে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পরিচালিত একটি নির্দিষ্ট সংস্থার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো। তাদের অভিযোগ, জাতিসংঘের মতো অভিজ্ঞ সংস্থাগুলোকে উপেক্ষা করে জিএইচএফের মতো অপ্রস্তুত একটি সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করায় গাজায় বিশৃঙ্খলা বাড়ছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা পৌঁছাচ্ছে না।
গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে অপুষ্টিজনিত কারণে কমপক্ষে ৬৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ইসরায়েল কার্যত পুরো গাজাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। ত্রাণ সহায়তার নামে প্রতিদিনই ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরু হয়। প্রায় ২১ মাস পেরিয়ে গেলেও যুদ্ধ বন্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো কার্যকর আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫৮ হাজার ফিলিস্তিনি, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।